মানুষের মানচিত্র: আমরা নোংরার মানুষ, নোংরাই জীবন!

মানুষের মানচিত্র: আমরা নোংরার মানুষ, নোংরাই জীবন!

মানুষের মানচিত্র: আমরা নোংরার মানুষ, নোংরাই জীবন!

ঈদ মানেই আনন্দ। সারা বছর যে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন, এ সময়টা পরিবারের সবাই একসঙ্গে কাটায়। এক সঙ্গে সিনেমা দেখা, খাওয়া-দাওয়া আরো কত কী! কোরবানির ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন। এ দিন কোরবানি দিয়ে মাংশ কাটা, মাংশ ভাগ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবাই। কিন্তু এরপরও কিছু মানুষ আছে যারা কোরবানির বর্জ্য পরিস্কার করতে করতেই দিন পার করে দেয়। তাদের জন্য ঈদের দিন আর অন্যদিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। তারা হলো সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

কাল ঈদ। তাই আজ মানুষের মানচিত্র’র আয়োজন সাজানো হয়েছে এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গল্প দিয়ে। যারা ঈদের দিনও এই শহরকে ঝকঝকে করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে যাবে অনবরত ভাবে।



রাজধানীর রাস্তা-ঘাট, নর্দমা, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে যাচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত অনেক কর্মী। ময়লা সংগ্রহ, শহরের রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেওয়া, নর্দমা পরিষ্কার, ময়লার ট্রাকে ময়লা তুলে দেয়া-অর্থাৎ সমাজে যে কাজগুলোকে ‘অশুচি’ বলে বিবেচনা করা হয় সেই কাজগুলোই করে থাকেন এ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। খেটে খেটে যারা শহরকে ঝকঝকে করে তোলেন, তাদেরই হতে হয় নানা বঞ্চনার শিকার। এসব মানুষদের জন্য কেউ ভাবে না, কেউ এদের নিয়ে চিন্তা করে না। এদের জীবন যাপন করতে হয় অন্ধকারের জীবন। তাদেরই একজন হলো ইসমাইল। বয়স ৩০ হবে প্রায়। তার সঙ্গে গল্প করে ঈদের অনুভুতি জানলাম।



কালকে ঈদের দিন কীভাবে পার করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল বলেন, ‘ঈদ! কী আর করুম? তোমরা কুরবানি দিবা, আমরা ওইসব পরিষ্কার করুম।’

ইসমাইল জানান, ঈদের দিন কাজের চাপ আরও বেশি থাকে তার। যেহেতু কোরবানির ঈদ, পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করে, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দূর্গন্ধ মুক্ত রাখতেই তিনি ব্যস্ত থাকেন।

‘ঝামেলা হয় যহন বার বার পরিষ্কার করন লাগে। অনেকে তো ঈদের পরেও গরু-চাগল কাটে। তহনই ঝামেলা হয়। বার বার পরিষ্কার করা ভাল লাগে না।’



পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরকে অনেক সময় নর্দমায় নেমে ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। কিছু কিছু ড্রেনেজ সিস্টেমের লাইনগুলো এতটাই গভীর যে সেটা পরিষ্কার করতে হলে পুরো শরীর নিয়েই ঢুকতে হয় ড্রেনে। সেই কাজ করার পর যখন নর্দমা থেকে বের হয়ে আসে, তখন তারা রীতিমত কাঁপতে থাকে, কষ্টে। এ কাজ করার জন্য বিশেষ কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রয়োজন হয় এক জোড়া হাত, এক জোড়া পা এবং ওই দূর্গন্ধযুক্ত অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ার মত সাহস।

ইসমাইল বলেন, দিনের শুরুতেই তাকে একটি নর্দমায় নেমে পড়তে হয়। দিনের শেষেও তার শরীর থেকে সেই দুর্গন্ধ যায় না। ড্রেনের নোংরা পানির মধ্যে মরা জীব জন্তু ভাসে, সেই পানিতেই মুখ ডুবিয়ে কাজ করতে হয় তাকে।

ইসমাইল বলেন, ‘ঈদ তোমাগো জন্য আপু। আমরা নোংরার মানুষ, নোংরাই জীবন। ঈদ আর কি? মাঝে মাঝে সময় পাইলে, একটু ঈদের সিমাই খাই, আর বাংলা ছবি দেখি।’

আমরা সারাদিন নিজেরাই রাস্তা ঘাটে ময়লা ফেলে নোংরা করে রাখি প্রাণের শহর ঢাকাকে। অথচ আমরা চাইলে ডাস্টবিন ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিতে পারি। তবে চলুন না, ঈদে কোরবানির বর্জ্য নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলি বা মাটিতে গর্ত করে চাপা দেই। অন্তত এই ঈদের সময়গুলোতে এই মানুষগুলোকে কিছুটা শান্তি দেই।
পোস্ট”:কপি
Share this article :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Copyright © 2014. আমাদের লেখা - All Rights Reserved
Template Created by Mony pabna